Home / Uncategorized / বিনিয়োগ সংকটে চট্টগ্রামের তৈরি পোশাকশিল্প

বিনিয়োগ সংকটে চট্টগ্রামের তৈরি পোশাকশিল্প

আমাদের সময় পত্রিকায় ০৭ মে ২০১৭ প্রকাশিত

RMG Chittagong এর চিত্র ফলাফল

১৯৯৭ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানির ব্যবসা শুরু করেছিলেন সাদাফ ফ্যাশন লিমিটেডের মালিক এসএম জাহিদ চৌধুরী। প্রথম দিকে একটি কারখানা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এই একটি থেকে তিনটি কারখানার মালিক হন। ২০০৪ সালের পর থেকে টানা লোকসান দিতে দিতে দুই প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কোনো মতে একটি প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন। যে কোনো সময় এটিও বন্ধ করে দেবেন বলে জানিয়েছেন এসএম জাহিদ চৌধুরী।

শুধু যে সাদাফ ফ্যাশন বন্ধ হয়ে গেছে, তা নয়। গত ২ এপ্রিল ২৫০ কর্মী চাকরি হারান এমএন গামের্ন্টস লিমিটেড বন্ধ হয়ে যাওয়াতে। গামের্ন্টসটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই গামের্ন্টসের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন শ্রমিকরা; কিন্তু গামের্ন্টসের মালিক মহিউদ্দীন আহমেদ পরিদপ্তরে হাজির হননি।

চট্টগ্রামে কোন ধরনের গামের্ন্টস বন্ধ হচ্ছে জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক মো. আবদুল হাই খান আমাদের সময়কে বলেন, চট্টগ্রামে যেসব গামের্ন্টস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে বেশিরভাগ হচ্ছে ছোট ও মাঝারি আকারের, যারা অধিকাংশ সময় সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করে। আর চট্টগ্রামে এখন নতুন করে কেউ গামের্ন্টস ব্যবসায় বিনিযোগ করতে চাইছে না। যারা একবার গামের্ন্টস ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তারা দ্বিতীয়বার আর বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে না। এতে সংকটে পড়েছে গামের্ন্টস ব্যবসার সংশ্লিষ্টরা।

বিনিয়োগ বোর্ড চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে নিবন্ধিত তৈরি পোশাক ও গার্মেন্টস এক্সেসরিজ শিল্পের ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চট্টগ্রামে মোট বিনিয়োগ হয়েছে ৩ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। আর ৮৮টি প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে ১২ হাজার ৩৯৬ লোকের। এই শিল্পে সব থেকে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে ২০১২ সালে। এই বছরে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত হয় ৩৬টি প্রতিষ্ঠান। বিনিয়োগ হয় ১১ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫ হাজার ৮৬৭ জনের। এর পর ২০১৩ সালে বিনিয়োগের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এই বছর বিনিয়োগ হয়েছিল ৩৮৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা কম। আর কমসংস্থান হয়েছে ২ হাজার ১৪১ জনের। ২০১৩ সালে নিবন্ধন করেছিল মাত্র ১১টি প্রতিষ্ঠান।

২০১৪ সালে চট্টগ্রামে নিবন্ধন হয়েছিল ১২টি প্রতিষ্ঠানের। বিনিয়োগ হয়েছিল ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। কর্মসংস্থান হয়েছিল ২ হাজার ৯৭৩ জনের। ২০১৫ সালে বিনিয়োগ হয় ৫১৮ কোটি টাকা। আর ২০১৬ সালে পোশাকশিল্পে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৫টি, বিনিয়োগ ৪৯৭ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের গত চার মাসে তৈরি পোশাকশিল্পে কোনো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করেনি। ফলে এ চার মাসে এ খাতে কোনো বিনিয়োগ নেই।

বিজিএমইএর চট্টগ্রাম শাখার তথ্য মতে, চট্টগ্রামে কারখানার সংখ্যা আছে ৬৭৬টি। এর মধ্যে চালু আছে ৩৯১টি। বন্ধ হয়ে গেছে ২৮৫টি প্রতিষ্ঠান। চালু থাকা ৩৯১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫০টি আমদানি ও রপ্তানি করছে। আর ১৪১টি প্রতিষ্ঠান সাব-ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে।

চিটাগাং মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহসভাপতি ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) চট্টগ্রাম শাখার পরিচালক এএম মাহাবুব চৌধুরী আমাদের সময়কে জানান, তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার বদলে দিন দিন বাড়ছে। দেশের বন্দরখরচ, বিদ্যুৎখরচ, জায়গার দাম বাড়তি, শ্রমিকদের মজুরিও বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা লোকসানে পড়ার আশঙ্কায় এই শিল্পে বিনিয়োগ করছেন না। যারা একবার বিনিয়োগ করেছেন তারা দ্বিতীয়বার এই শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ পাচ্ছেন না।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) পরিচালক শাহিদ উদ্দীন আহমেদ আজাদ আমাদের সময়কে জানান, চট্টগ্রামে পোশাক খাতে যে বিনিয়োগ কম হচ্ছে তা কিন্তু না। সবক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের বড় পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ বাড়িয়েই চলেছেন।

চিটাগাং চেম্বারের পরিচালক ও বিন হাবিব লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুল হক জানান, ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকার তারল্য উদ্বৃত্ত; কিন্তু ব্যাংক ঋণ শিল্পে বিনিয়োগের পথে অন্তরায় চট্টগ্রামের উদ্যোক্তাদের জন্য। কারণ সব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় রাজধানীতে। তাই চট্টগ্রাম থেকে ব্যাংক ঋণ পাওয়া যে কী হয়রানি ও সংকটের, তা কেবল ভুক্তভোগীরাই অনুধাবন করতে পারেন। ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার শিল্পে বিনিয়োগে একটি বড় বাধা।

উল্লেখ, চট্টগ্রামে ১৯৯০ সালের পর আর কোনো শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হয়নি। চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড), কর্ণফুলী ইপিজেড, ষোলশহর, কালুরঘাট, ফৌজদারহাট এবং সাগরিকা বিসিক শিল্পনগরীর কোথাও আর কোনো জায়গা খালি নেই শিল্প স্থাপনের মতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

x

Check Also

১৫ বছরে পোশাক পণ্যের মূল্য কমেছে ৪০ শতাংশ : বিজিএমইর প্রতিবেদন

ভোরের কাগজ পত্রিকায় ৩০ মে তারিখে প্রকাশিত গত ১৫ বছরে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ...