Published in BDNews24 on Sunday, 11 March 2017
বাংলাদেশে বস্ত্র খাতে গত তিন দশকে যে উন্নতি হয়েছে, আগামী ৫ বছরে পাট খাত সেই অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শনিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে পাট খাতের সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এ আশা কথা শুনিয়েছেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, পাটের সম্ভাবনা বিশাল ও অফুরন্ত। এ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে পাটের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ইতোমধ্যে পাট আইন-২০১৭ পাসসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাটের উন্নয়য়েন সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে।
নিজ মন্ত্রণালয়ের কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মির্জা আজম বলেন, “২০১৪ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখলাম, এ খাতের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে (বিজিএমইএ, বিকেএমইএ) মন্ত্রণালয়ের কোনো সর্ম্পক নেই। এমনকি বস্ত্র খাতের কোনো অনুষ্ঠানে মন্ত্রীকে ডাকা হয় না।
“পাটের সঙ্গে এদেশের স্বাধীনতা জড়িত। স্বাধীনতা যুদ্ধের ইস্যুর সঙ্গে পাট জড়িত ছিল। এদেশের পাটে পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়ন হতো; অথচ এদেশের কৃষক নায্য মূল্য পেতো না।”
পাট নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু পাটকে অনেক গুরুত্ব দিতেন। পাট শ্রমিকদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর পাটের বেসরকারিকরণের নামে লুটপাট শুরু হয়েছে। পাট ধ্বংস করতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হয়েছিল।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে আদমজী জুট মিল বন্ধ করা হয়েছিল। অথচ ওই সময়ে পার্শ্ববর্তী ভারতে নতুন ৯টি পাট মিলে অর্থ সহায়তা দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক।
বিজেএমসির লোকসান প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিজেএমসিতে নিয়মের বালাই ছিল না; অনিয়মই নিয়ম। লোকসানের কিছু কারণ আছে। লোকসান ২০০ কোটি কমানো হয়েছে। যৌক্তিক লোকসান মেনে নিতে চাই।
“বেসরকারিকরণের নামে ৫০ কোটি টাকা মূল্যের পাটকল ৫ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়। ওই টাকাও পাওয়া যায়নি। পাটকলের জায়গায় যে গাছপালা ছিল- তা বিক্রি করে দেওয়া হয়। গাছপালার দামও বিক্রির টাকার চেয়ে বেশি ছিল।”
মন্ত্রী বলেন, “আমরা পাটের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। পাট সেক্টরকে সামনে এগিয়ে নিতে চাই। আন্তর্জাতিক বাজারে গবেষণা চালাচ্ছি। ২০০টি উপজেলায় কৃষদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ বীজ, সার সরবরাহ করছি। পাট পঁচানোর মেশিন বিনামূল্যে সরবরাহ করছি।”
মির্জা আজম বলেন, পাট পণ্যের বহুমুখীকরণ ও অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের বাজার সৃষ্টির জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৭টি পণ্যে পাটের দ্রব্য ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাট খাতের উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে চাই।
“প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবছর জাতীয় পাট দিবস পালন করা হচ্ছে। রাজধানীতের জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে মেলা চলছে। জনগণের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মেলার সময় ২ দিন বাড়ানো হয়েছে। প্রথমে বিভাগ এবং পরে জেলা পর্যায়ে মেলা করা হবে। পাটের উপর একটি আন্তর্জাতিক মেলাও করবো।”
সেমিনারের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম।
অন্যদের মধ্যে বিজেএমসি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোসলেম উদ্দিন বলেন, ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল ও সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বক্তব্য রাখেন।